- কেরানীগঞ্জে শ্বশুরের নামে ভুয়া প্রকল্প: সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে
কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নে রাস্তা মেরামতের টিআর কর্মসূচির আওতায় প্রায় চার লাখ টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ রাশেদ খান ও অফিস সহায়ক অর্ক হোসেনের বিরুদ্ধে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, অফিস সহায়ক অর্ক হোসেন কলাতিয়া ইউনিয়নের একটি রাস্তা মেরামতের প্রকল্পে নিজের শ্বশুরকে সভাপতি দেখিয়ে প্রায় চার লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন। অথচ তার শ্বশুর ইউনিয়ন পরিষদের কোনো দায়িত্বে নেই। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে কোনো কাজ না করেই ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিল পাস করা হয়। পুরো টাকা তুলেছেন কি না প্রশ্নে অর্ক নিজেই স্বীকার করেন, “প্রায় ৫০ শতাংশ টাকা তুলেছি।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রাশেদ খান জেনেশুনেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেন এবং বিল পাসে সহযোগিতা করেন। তাদের মতে, অর্ক যেমন নিজের শ্বশুরকে সভাপতি বানিয়ে অনিয়ম করেছেন, তেমনি রাশেদ খানও জেনেশুনে সরকারি অর্থ আত্মসাতে জড়িত।
আরও জানা যায়, অর্ক ও তার শ্বশুর ভুয়া স্বাক্ষর ও দলিলপত্র ব্যবহার করে প্রকল্পের বিল পাস করান। প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে দেখানো শ্বশুরের কোনো সরকারি পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও অফিসের ভেতরের প্রভাব খাটিয়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। স্থানীয়দের ভাষায়, “এটি কেবল একটি প্রকল্প নয়—উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম চলছে।”
এর আগে, ২০১৯ সালে একই অফিস সহায়ক অর্ক হোসেনের বিরুদ্ধে অসহায়দের জন্য বরাদ্দ সরকারি কম্বল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি গোপন রাখার জন্য কম্বল ফেরত এনে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
কলাতিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বিউটি আক্তার জানান, “প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। রাশেদ খান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অনুরোধে আমি কাগজে স্বাক্ষর দিই। সবকিছু আগেই ঠিক করা ছিল।”
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রাশেদ খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং অফিসেও পাওয়া যাননি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রীনা খাতুন বলেন, “বিষয়টি প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে, প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা দাবি করেছেন, সরকারি অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, “প্রকল্পের নামে লুটপাট বন্ধ না হলে জনগণের টাকায় উন্নয়নের স্বপ্ন কাগজেই থেকে যাবে।”
প্রতিবছর গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারের বিপুল বরাদ্দ থাকলেও মাঠপর্যায়ে তদারকির অভাবে এ ধরনের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে। কেরানীগঞ্জের এই ঘটনা সেই চলমান দুর্নীতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

