• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রুপালী পর্দার অন্ধকার সময়

জয়নাল আবেদীন জয়
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ১৮:০৭ অপরাহ্ণ
রুপালী পর্দার অন্ধকার সময়

শিল্পাঞ্চল রূপগঞ্জের ১০ লাখ জনস্যংখ্যা অধ্যুষিত এলাকায় এখন সচল সিনেমা হলের সংখ্যা মাত্র একটি। অথচ বছর দশেক আগেও এখানে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিলো ৬ টি। একসময় সিনেমা হল ছিলো অনেকের রমরমা ব্যবসা। আর এখন অব্যাহত লোকসানের মুখে সারাদেশে একের পর এক হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার জন্য কিছু কারণ দায়ী বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জের একাধিক সিনেমা হল মালিক, কর্মচারী ও দর্শক।
সিনেমা হল মালিকরা জানান, ৯৫’ পরবর্তী অশ্লীলতার কারণে মধ্যবিত্ত দর্শক হলবিমুখ হতে থাকেন। এ অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি গত এক দশকে। দর্শক সংকটে লোকসান গুণতে থাকেন হল মালিকরা। এখন উপজেলার ৬ টি সিনেমা হলের মধ্যে একটি মাত্র হল চালু রয়েছে। তাও আবার চলে খুড়িয়ে-খুড়িয়ে। বন্ধ হলগুলোর মধ্যে রয়েছে মুড়াপাড়ার মায়া সিনেমা হল, ইছাপুরার তৃষ্ণা সিনেমা হল, গোলাকান্দাইলের শিউলী সিনেমা হল, কাঞ্চনের সোনালী সিনেমা ও সানলাইট সিনেমা হল। এখন শুধু রূপসীর স্বর্ণামহল সিনেমা হলটি চালু আছে। সেটাও চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। এখন সেই হলের দর্শক রিকসাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা আর বখাটে যুবকরা। রূপগঞ্জে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের স্থানে গড়ে উঠেছে টেক্সটাইল মিল ও অন্যান্য স্থাপনা। একমাত্র চালু থাকা হলটির সমস্যার শেষ নেই। স্বর্ণা মহগ সিনেমা হলের মালিক জালালউদ্দিন সিকদার আপন বলেন, সিনেমার গুণগত মান, অশ্লীল দৃশ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির কারণে কেউ সিনেমা হলে আসতে চান না। প্রতি শোতেই আমাদের বেশ লোকসান গুণতে হচ্ছে। কীভাবে যে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখব বুঝে উঠতে পারছি না। হলে সিনেমা দেখতে আসা দর্শক আবুল, মারফত মিয়া, সিরাজ, আসমাসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা অভিযোগ করে বলেন, দর্শক এখনও রুচিশীল। কিন্তু হলগুলোর যন্ত্রপাতিতে আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি। নেই ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। আর অশ্লীল কাটপিস সিনেমাই বেশি প্রদর্শন করা হয়, যা পরিবার নিয়ে দেখার মতো নয়। আবার মানসম্মত চলচ্চিত্রও নির্মাণ হচ্ছে না। এসব কারণেই হল দর্শকশূণ্য হয়ে পড়েছে। উপজেলা মুড়াপাড়া বাজারের মায়া সিনেমা হল একনামে পরিচিত ছিল একসময়। বন্ধ হওয়া হলটির মালিক ননী বাবু বলেন, মূলত দক্ষ নায়ক-নায়িকা সংকটের কারণে সিনেমা হলে দর্শক আসেন না। অথচ একসময় এ হলে মানুষ জায়গা দেওয়া যেতো না। এখন যেসব সিনেমা তৈরী করা হয় তাতেও অশ্লীল দৃশ্যে ভরপুর থাকে। প্রয়াত নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর এই ব্যবসা আরো লাটে উঠেছে। এখনকার আর্টিস্টরা ভালোভাবে কথাই বলতে পারেন না। এ জন্য দর্শকরা সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ব্যবসা খারাপ হওয়ার জন্য প্রথমত দায়ী অশ্লীল সিনেমা। এরপর রয়েছে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ও ইন্টারনেট। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে একটি পরিবার ঘরে বসেই সব ছবি দেখতে পাচ্ছে। এখন তো সবকিছু মোবাইলে পাওয়া যায়। তাহলে কী দেখতে তারা হলে আসবেন। তিনি লোকসানের কারণে হলটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান। ইছাপুরা এলাকার তৃষ্ণা সিনেমা হলের মালিক সাজ্জাদ মোল্লা বলেন, এখন আর দর্শক আসে না। কয়েক বছর ধরে লোকসান গুণতে গুণতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই গত সাত মাস আগে হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। কাঞ্চনের সোনালী সিনেমা হল। একসময় ধুন্ধরাম ব্যবসা ছিলো। লোকসানের কারণে হলটি বন্ধ হয়ে গেছে। হলের মালিক প্রয়াত সমিরউদ্দিনের নাতি মাজহারুল ইসলাম মাসুম বলেন, একসময় আমাদের হলে দর্শক জায়গা দেয়া যেতো না। এখন হলে মানুষ আসে না। তাই সিনেমা হলটি একেবারের জন্য বন্ধ করে দিয়ে সেখানে টেক্সাইল মিল ভাড়া দিয়েছি। এদিকে, মালিকরা সিনেমা হলের বদলে নতুন ব্যবসা করছেন। অন্যদিকে কর্মচারীরা হয়ে গেছেন বেকার। মায়া সিনেমা হলের কর্মচারী রহমান মিয়া বলেন, হল চালু থাকাকালীন কিছু বেতন পাইতাম। যা দিয়া আমার সংসার চলতো। এখন ঋণ করে সংসার চালাচ্ছি। আমার মতো সিনেমা হলের ৪০ জনের মতো কর্মচারী-শ্রমিক বেকার হয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।