• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কায়েতপাড়ার বালু ব্রীজ, পিলার নির্মাণের দেড়যুগ

জয়নাল আবেদীন জয়
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১, ২০:৪৪ অপরাহ্ণ
কায়েতপাড়ার বালু ব্রীজ, পিলার নির্মাণের দেড়যুগ

রাজধানীর আফতাফ নগরের শেষ মাথায় সেতুটির অবস্থান। এ সেতুটি নির্মান হলে ঢাকার সঙ্গে তৈরি হতো রূপগঞ্জের সেতুবন্ধন। পাশাপাশি কাঁচপুর ও সুলতানা কামাল সেতুতে কমে যেতো যানজট। খুলে যেতো নদীপাড়ের মানুষের ভাগ্যের চাকা। কথা ছিল কাজ শেষ হবে এক বছরে। নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না মেলায় সেতু আর নির্মান হয়নি। সেতুর ৪টি পিলার দেখেই রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নসহ রাজধানী ঢাকার পূর্বাঞ্চলের লাখো মানুষের কেটে গেছে ১৭ বছর!
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রস্তাবিত রামপুরা-রূপগঞ্জ সড়কের বালু নদীতে তৃতীয় সেতুর প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০০১ সালে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধীনে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৩ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধায়নে ১ বছরের মধ্যে সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পান জাহিদ এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিস্তু ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে বরাদ্দ মেলে মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এরপর আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে ৪টি স্প্যান নির্মাণের পর সেতুর কাজ থমকে যায়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭৫ দশমিক ৫ মিটার ও প্রস্থ ১০ মিটার। স্প্যান রয়েছে ৪টি। সেতুর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার আগেই দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানান, সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি হুকুম দখল করা হয়নি। কেবল জমি মালিকদের পরপর দুটি নোটিশ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সেতুর দু’পাশের জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় সেসময় সেতু নির্মাণে বিরোধিতা করেন। এ নিয়ে হাইকোর্টে তারা একটি পিটিশন দাখিল করলে থমকে যায় নির্মান কাজ। এরপর নির্মানব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পালায় ঠিকাদার। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ রফিকুল ইসলাম জানায়, সেতুটি নির্মিত হলে রূপগঞ্জসহ ঢাকার পূর্বাঞ্চলের খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা ও এর আশপাশের কয়েক হাজার মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলে যাবে। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা ও গার্মেন্ট শিল্প। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। সেতুটি নির্মিত হলে কাচঁপুর ও সুলতানা কামাল সেতুর যানজট কমে যাবে। সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ ১০ জেলার যানবাহন সহজে ভুলতা হয়ে কায়েতপাড়া দিয়ে রাজধানীর রামপুরায় প্রবেশ করতে পারবে। অপরদিকে কায়েতপাড়া এলাকার গণমাধ্যমকর্মী রাসেল আহমেদ বলেন, এ সেতু নির্মাণ হলে ঢাকার সঙ্গে কয়েকটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে। কলকারখানা গড়ে ওঠবে। ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত রামপুরা-কায়েতপাড়া সড়কের শীতলক্ষ্যা নদীর উপড় অপর আরেকটি সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় বালুনদের সেতুটি এখন সময়ের দাবি। আমরা কায়েতপাড়াবাসী রাজধানীর সবচেয়ে নিকটবর্তি এলাকার হয়েও একটি মাত্র সেতুর অভাবে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নারায়নগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী ইকবাল জানান, বালু নদীর উপড় কায়েতপাড়া সেতুটি অনেক পুরনো একটি প্রকল্প। যতোটুকু জানি নির্মান ব্যয় বেড়ে যাবার কারনে সেসময় ঠিকাদার আর কাজটি করেননি। পরবর্তিতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পটির অগ্রগতি থেমে যায়। এরপর ইছাখালি-নগরপাড়া রাস্তাটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেয়ায় পক্রিয়া চুড়ান্ত করে ফেলেছে। সেক্ষেত্রে সওজের পক্ষ থেকে আপাতত কাজ শুরু করার কোন সম্ভাবনা নেই।
নারায়নগঞ্জ-১ ( রূপগঞ্জ ) আসনের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ( বীরপ্রতিক ) জানান, রাজধানীর সাথে রূপগঞ্জকে একত্রিত করার প্রয়াসে রূপগঞ্জ জুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনো বড় বড় কিছু প্রকল্প চলছে। শীতলক্ষ্যা নদীর উপর বীর প্রতিক গাজী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। এই সেতু দিয়ে রামপুরা প্রবেশের জন্য বালু নদীর সেতুটির নির্মান কাজ অচিরেই চালু হবে। মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় কারনে এতোদিন বালু নদীর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারছিলনা সরকার। তবে সেসব ঝামেলা মিটে গেছে। শিঘ্রই সেতুর কাজ চলমান দেখতে পাবে রূপগঞ্জবাসী।