• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডাক্তারের সিরিয়াল আগে না পাওয়ায় ছাত্রলীগ সভাপতির স্ত্রী পরিচয়ে হাসপাতালের মধ্যে মারামারি!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত অক্টোবর ২০, ২০২৩, ১৬:৩৮ অপরাহ্ণ
ডাক্তারের সিরিয়াল আগে না পাওয়ায় ছাত্রলীগ সভাপতির স্ত্রী পরিচয়ে হাসপাতালের মধ্যে মারামারি!
সাভারে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসেন এক রোগী। এ সময় একই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসেন ব্যাংক কলোনী এলাকার আঁখি নামে অপর এক নারী। তিনি সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পরে এসে আগে সিরিয়াল চাওয়ায় বাধা দেন ওই রোগী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই রোগীকে মারধর শুরু করেন আঁখি।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাভার পৌরসভার থানা স্ট্যান্ডের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চতুর্থ তলায় এই ঘটনা ঘটে। পরে আঁখির ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আতিকের অনুসারীরা হাসপাতালে এসে আরো কয়েকজন সাধারণ রোগীকেও মারধর করে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন- মাদ্রাসা শিক্ষক মোশাররফ হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী রূপালী বেগম (৪০) ও ছেলে শিবলী আহম্মেদ (২১)। এছাড়াও আহত আরেক জনের পরিচয় জানা যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মাহমুদুল হাসান।
একাধিক সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা ওই ব্যক্তিকে মারধরে বাধা দেন ব্যাংক কলোনী এলাকার এক মাদ্রাসা শিক্ষক। ওই মাদ্রাসা শিক্ষক নিজেও অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছিলেন। তার সাথে ছিলেন স্ত্রী ও সন্তান। আঁখির মারধরে বাধা দেওয়ায় চড়াও হয় ওই মাদ্রাসা শিক্ষকের উপর।
পরে আঁখি নামের ওই নারী সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিককে ফোন দিয়ে লোক পাঠাতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পর আতিকের ব্যক্তিগত সহকারি নজরুল ইসলাম ও সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জামান খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন এসে হাজির হয়। আঁখির মুখে এক পাক্ষিক ঘটনা শুনে তার সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ানো ওই রোগীকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। তবে এর আগেই ওই ব্যক্তি হাসপাতাল ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যান। তাকে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বাধা দানকারী ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে পালিয়ে যাওয়া ব্যাক্তিকে খুঁজে এনে দিতে চাপ দিতে থাকেন নজরুল ইসলামসহ অন্যরা।
মোশাররফ হোসেন নিজেকে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ব্যাংক কলোনী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল্লাহর আপন ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে সবাইকে শান্ত হতে বলেন। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলেন ‘তুই জানিস না, আঁখি আপা আতিক ভাইয়ের কি.?
এই কথা শুনে শিক্ষক মোশাররফ হোসেনের ছেলে  শিবলী আহম্মেদ এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে কিল ঘুষি মারেন নজরুল। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এলোপাথাড়ি ভাবে শিবলীকে পেটানো শুরু করেন।
চোখের সামনে ছেলেকে মারতে দেখে শিবলীর মা রূপালী বেগম এগিয়ে আসার পর তাকেও সজরে ধাক্কা দিলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে হাসপাতালের ম্যানেজার খালেক এসে শিবলী আহমেদকে উদ্ধার করেন। পরে আহত অবস্থায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এর আগে  মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনার সমালোচনা করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার সহ সচেতন মহল।
এ বিষয়ে ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আঁখি ও সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাভারের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীকে পেটানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেয়ে ওসি স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’